নতুন সরকার গঠনের পর ১ম মন্ত্রিসভা বৈঠকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের অনেকগুলো দিক নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকের বরাত দিয়ে সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ
থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উনার পক্ষ থেকে
মন্ত্রীদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব
মো. মাহবুব হোসেন আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির ওপর উনি
(প্রধানমন্ত্রী) জোর দিয়েছেন তা হলো মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষত, আগামী রমজানে যেন
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সে পণ্যগুলোর
সরবরাহ পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারেও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনী যে ইশতেহার দেওয়া হয়েছে, সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সব
মন্ত্রণালয়কে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইশতেহারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত
বিষয়গুলো ভিত্তি করে যেন কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং সেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ,
বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারপ্রধান কৃষি উৎপাদনের কথা বলেছেন
জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, কৃষি উৎপাদন যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর
রাখতে হবে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আরও সংরক্ষণাগার তৈরির দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট
অর্থনীতি এবং স্মার্ট জনগণ। এ চারটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে যে মন্ত্রণালয় যে অংশের
সঙ্গে জড়িত সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করার জন্য দিক নির্দেশনা
দিয়েছেন।
‘যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে, সেগুলো
তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন । যে প্রকল্প থেকে জনগণ সরাসরি উপকার পাবে
সেগুলো তাড়াতাড়ি নিতে বলেছেন। নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে সেটি কীভাবে জনগণের কল্যাণে
কাজে আসবে, তা খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে বলেছেন। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহির কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরো জানিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো
টলারেন্সের কথাও। সব মন্ত্রণালয়কে একই নীতি অনুসরণ করতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব
আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি যেগুলো আছে সেগুলো যেন প্রকৃত উপকারভোগীরা
পায়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি শূন্যপদ পূরণের
নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সাফল্যের যে
ধারা তৈরি হয়েছে, সেটি যেন কোনো অবস্থায়ই ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছেন।
‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার
অনুসন্ধান করে সেখানে প্রবেশে কীভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্য; গার্মেন্টস শিল্পের
বিকাশে যেভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল- এ তিনটি ক্ষেত্রেও যেন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়,
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রধানমন্ত্রী
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর (আইসিটি) শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছেন জানিয়ে মাহবুব
হোসেন বলেন, সেটি যেন কর্মমুখী হয়। ফিল্যান্সিং যেন আরও বাড়তে পারে, সেই নির্দেশনা
দিয়েছেন। যুব সমাজকে খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন
কর্মসূচি নিতে বলেছেন, যেন তারা মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে বিরত থাকতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা
সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশনা দিয়েছেন, দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বিষয়ে
মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, সেটি লাঘবের জন্য তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দিক নির্দেশনা
দিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে ব্যবস্থা
নিতে দেখা যাচ্ছে না- এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজ মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক
হলো। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। দেখেন কাল থেকে কী হয়, কাল
থেকে নিশ্চয়ই কার্যক্রম দেখবেন, আমি আশা করছি।
দুর্নীতি বিষয়ে
প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট করে কী বলেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী
দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে বলেছেন। সরকারি ক্রয়ের
ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলেছেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব
বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন আরএমজিকে (তৈরি পোশাকশিল্পে) আমরা বিশেষ
সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম বলেই এ খাতে এত ভালো করেছি। চামড়া ও পাট এ দুটি কাঁচামাল
আমাদের দেশেই হয়। এ দুটিকেও গার্মেন্টসের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য উনি
বলেছেন। যেন এ তিনটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারি।